জাতিসংঘের ব্যাখ্যা, মহামারির ১৮ মাসে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিল। আর ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম তিন মাসেই। অর্থাৎ এই দফায় দারিদ্র্য বৃদ্ধির গতি মহামারির চেয়ে বেশি। ইউএনডিপির প্রশাসক আখিম স্টেনারের কথায়, ‘জীবনযাপনের খরচ যেভাবে বেড়েছে, তা এখনকার প্রজন্মের কাছে নজিরবিহীন। ফলে এবারের সমস্যা খুবই বিপজ্জনক।’
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। অন্য দিকে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে ইউক্রেনের অনেক সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাণিজ্য এখন বন্ধ। এ দুই কারণে খাদ্য ও জ্বালানির সরবরাহ কমতে শুরু করেছে; মাথাচাড়া দিয়েছে সেগুলোর দাম। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে দরিদ্র দেশগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় পরিবারের মোট আয়ের ৪২ শতাংশ খরচ হয় খাদ্য সংগ্রহ করতে। যুদ্ধ শুরুর পর গম, চিনিসহ সব প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ওই অনুপাতও বেড়েছে। এতে সংকট উল্টো বেড়েছে।
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। এর জেরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ছাড়িয়েছিল ব্যারেলে ১৩৯ ডলার, যদিও গতকাল তা ১০১ ডলারে নেমে আসে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং অত্যাবশ্যক পণ্যের দামও।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ২৩০ কোটি। যুদ্ধে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। স্টেনারের বক্তব্য, এই সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট সম্পদ সারা বিশ্বে নেই, এমনটা নয়; কিন্তু এর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের ইচ্ছাই দেখা যাচ্ছে না। তাঁর পরামর্শ, সবাইকে এক হারে জ্বালানিতে ভর্তুকি না দিয়ে দরিদ্র মানুষদের নগদে তা দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে সম্পদশালী দেশগুলো বাড়াতে পারে দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও; দান হিসেবে নয়, নিজেদের স্বার্থেই। বিষয়টি হলো দরিদ্র দেশগুলো এই দুর্যোগের সময় টালমাটাল হয়ে পড়লে ঋণদাতাদের পক্ষেও ঋণ তুলে নেওয়া কঠিন।
মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় অর্থনীতির নীরব ঘাতক। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়, সেই অর্থ কার্যত একধরনের বাধ্যতামূলক কর। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের। হিসাবটা পরিষ্কার; আগে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো, মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ হলে সেই একই পণ্য কিনতে হবে ১১০ টাকায়। কিন্তু ওই বাড়তি ১০ টাকা আয় না বাড়লে ১০ টাকার পণ্য কম কিনতে হবে—মূল্যস্ফীতিতে এমনটাই ঘটে। প্রকৃত আয় কমে, ভোগও কমে যায়।