ঢাকা | সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

বাবার পথ ধরে ধানের শীষের প্রার্থী হচ্ছেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদন | প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:০০

ফাইল ছবি

প্রার্থী হিসেবে নতুন-পুরোনোর মিশেলে যে ২৩৭ জনকে বিএনপি বেছে নিয়েছে, তাতে স্থান পেয়েছেন দলটির দ্বিতীয় প্রজন্মের বেশ কিছু নেতা। ধানের শীষের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে যাওয়া এসব প্রার্থীর মধ্যে কেউ কেউ আগেও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। দুয়েকজন দায়িত্ব পালন করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবেও।

পঞ্চগড়-১ আসনে সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকারের জায়গায় তার ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে ধানের শীষের টিকেট দিয়েছে বিএনপি। নওশাদ বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক।

সাবেক যুব ও ক্রীড়া এবং সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুলকে নাটোর-১ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। আইনজীবী পুতুল নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।

কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে রাগীব রউফ চৌধুরীকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্যানেল আইনজীবী।

সাবেক খাদ্য, তথ্য এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে যশোর-৩ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।

ঢাকা-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাচ্ছে বিএনপি। রবিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব।

অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে ঢাকা-৬ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী শামা ওবায়েদ দলটির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন।

সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে ফরিদপুর-৩ আসনের প্রার্থী করেছে বিএনপি। নায়াব ইউসুফ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমানকে মৌলভীবাজার-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান ২০০১ সালের উপ-নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের বাবা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। মীর হেলাল বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-৭ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। হুম্মাম বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।

 

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপি। বাপ্পা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজকে গাজীপুর-৪ আসনে প্রার্থী করছে বিএনপি। ২০১৮ সালেও এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন বর্তমানে গাজীপুর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ।

মানিকগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষের টিকেট পাওয়া মঈনুল ইসলাম খান সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ইয়াসের খান চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়ে বিএনপি। তিনি নান্দাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক।

শেরপুর-৩ আসনের প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল হকের ছেলে। তিনি ২০০১ সালের নবম সংসদের সদস্য ছিলেন বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।

শেরপুর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী সাবেক হুইপ প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে। তিনিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাকে শেরপুর-১ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ২০১৮ সালের বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বর্তমানে ৩২ বছর বয়সি প্রিয়াঙ্কা। পেশায় চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

ঝিনাইদহ-৩ আসনে প্রার্থী হিসাবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মেহেদী হাসান ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে।

গাজীপুর- ২ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন এম মঞ্জুরুল করিম রনি। তিনি গাজীপুরের সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নানের ছেলে।

পিরোজপুর- ২ আসনে মনোনায়ন পেয়েছেন আহমেদ সোহেল মঞ্জু সুমন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে।

রাজনীতির বিশ্লেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করছেন, প্রবীণ ও প্রয়াত নেতাদের এই উত্তরাধিকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপির ‘ভালো ফলাফল’ বয়ে আনতে পারে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘যে নেতা প্রয়াত, স্বাভাবিকভাবেই তার একটা ফুটপ্রিন্ট থেকে যায়। তারও একটা সাপোর্ট বেজ থেকে যায়। তারপর তার ছেলে যদি ভালো কাজ করে, নির্বাচনে রেজাল্ট নিয়ে আসে, সেটা অবশ্যই যাচাই করা হবে।’

আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রয়াত নেতাদের সন্তানরা রাজনীতিতে সক্রিয়, এলাকায় সক্রিয়, বিভিন্ন পদ-পদবিতে আছে। তারা তো দাবি করতেই পারে। কোনো নেতার সন্তান হিসেবে নয়, তাদের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে আমরা অবশ্যই তাদের বিবেচনায় আনা হবে।’

আর বিএনপির তরুণ নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলছেন, ‘এখানে নতুনদের যেমন প্রধান্য দেওয়া হয়েছে, তেমনি প্রবীণ অভিজ্ঞদের রাখা হয়েছে একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে প্রত্যাশায়।’




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top