ঢাকা | বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১
ঢাকা চেম্বারের সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ

টাকা ছাপিয়ে বাজারে দেওয়া হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩

টাকার প্রতিকী ছবি

টাকা ছাপিয়ে বাজারে দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান। রোববার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ছে- কয়েকজন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদের এমন আলোচনার প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা (জুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪)’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

 

সেমিনারে ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, উচ্চ মূল্য দিয়েও শিল্পখাতে চাহিদামত জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পণ্য উৎপাদন সংকুচিত হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করা না গেলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেবে। বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার একদিকে সুদের হার বাড়িয়েছে। আরেকদিকে সরকারের প্রয়োজন মেটাতে টাকা ছাপাচ্ছে, যেটা বিপরীতমুখী।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক আকাঙ্খা রয়েছে, তবে সেখানে সময় মতো পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। বর্তমানে দেশের কর জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ। এটি বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে রাষ্ট্রের কোষাগারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিতে হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, অনেকেই বলেন যে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা না জেনে সম্পূর্ণ ভুল বক্তব্য দিচ্ছেন। টাকা ছাপানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের মাধ্যমে বোঝা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের আকার গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে) হয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ যত টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রবেশ করেছে, তার চেয়ে কম টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। কাজটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। ফলে টাকা ছাপিয়ে বাজারে দেওয়া হচ্ছে, এ কথা সঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, মুল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমুখী নীতি অব্যাহত রাখবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্পখাতে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করেছে।

সেমিনারে ড. মসিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দশকে দেশের অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ অন্যতম। এমতাবস্থায় যেকোনো নীতির সফল বাস্তবায়ন হবে না, যদি না ব্যক্তিখাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে নীতি প্রণয়ন না হয়। সেই সাথে বেসরকারি খাতকে সকল সমস্যা সমাধানে সরকারের ওপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন তিনি।

ড. মসিউর রহমান বলেন, কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরোনো কথাবার্তা এখনও চলছে। বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। দেশের জাতীয় আয় ও রাজস্বের অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কর ব্যবস্থার হারের গড়মিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিনিয়োগে স্থাবিরতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রাপ্তিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এতে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, সিএমএসএমই, তথ্য-প্রযুক্তি এবং সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয় পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, সহনীয় মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তি, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন জরুরি।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, কর ব্যবস্থাপনা ও কর আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা দরকার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয়, যেটা উদ্বেগের বিষয়। এ ছাড়া তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে চাঁদাবাজি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top