ডলারের দাম রেকর্ড বেড়ে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২২ ০৯:১৭

ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে টাকার আরও অবমূল্যায়ন করল বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি একদিনে রেকর্ড দুই টাকা পাঁচ পয়সা পর্যন্ত দর বাড়িয়ে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সায় সোমবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে। কয়েকটি ব্যাংকের কাছে মোট ১৩ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে প্রথম পর্যায়ে বাড়ায় এক টাকা ৬০ পয়সা। এর আগে গত ৩০ মে একদিনে সর্বোচ্চ এক টাকা ১০ পয়সা দর বাড়ানো হয়।
সবমিলে চলতি অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৬৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রমাগত ডলার বিক্রির ফলে সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নেমে ৪১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের ওপর দর ছেড়ে দিলেও কোনো ব্যাংক অস্বাভাবিক দরে বেচাকেনা করছে কি-না, নিয়মিতভাবে তা তদারকি করছে। একইসঙ্গে বাজারে অস্থিরতা কাটাতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। যে কারণে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে বেশির ভাগ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের দরের কাছাকাছি ডলার বেচাকেনা করছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি করা দরেই আন্তঃব্যাংক লেনদেন হয়ে থাকে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার শুরুতে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করে। সর্বশেষ বিক্রি করা হয় ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলো সব পর্যায়ে ডলারের দর বাড়িয়েছে। সোমবার বেশিরভাগ ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯৩ টাকায় ডলার বিক্রি করে। আগের দিন যা ছিল ৯১ টাকা ৫০ পয়সা। একইভাবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে দর বাড়িয়ে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। আগের দিন ছিল ৯১ টাকার নিচে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। একইসঙ্গে ৯০ পয়সা দর বাড়িয়ে দেয়। গত বুধবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের দিন ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারে গড়ে দুই টাকা পর্যন্ত দর বাড়ায়। অবশ্য মাঝে কয়েকদিন আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর ৯৭ টাকায় উঠেছিল। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে দর উঠেছিল ৯৫ টাকা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে বৈঠক করে ডলারের অভিন্ন দর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। আর সব পর্যায়ে তা ৯০ টাকার নিচে রাখতে বলা হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকট বেড়ে যাওয়ার পর ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে ডলারের দর নির্ধারিত হয়। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোমবার প্রতি ডলারে দুই টাকা পাঁচ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ডলারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। ডলারের ওপর চাপের বিষয়টি বোঝা যায় গতবছরের আগস্ট থেকে। যে কারণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডলারের দর একটু একটু করে বাড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় পর আগস্টে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ কমতে থাকে। শুধু চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত প্রতি ডলারের দর বেড়েছে ৭ টাকা ১৫ পয়সা। সর্বশেষ গত বুধবার প্রতি ডলারে ৯০ পয়সা বাড়ানো হয়। এর আগে ৩০ মে বাড়ানো হয় এক টাকা ১০ পয়সা। এর মানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন করেছে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশের আমদানি দায়ের বেশিরভাগই নিষ্পত্তি হয় ডলারে। ফলে ডলারের দর বাড়লে তার প্রভাব পড়ে পণ্য মূল্যে। দেশের বাজারে ইতোমধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের দর বেড়েছে।
ডলারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে চেষ্টা করছে। বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ, বাড়তি শুল্ক আরোপ ও বিভিন্ন পর্যায়ে বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: