ঢাকা | সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

ব্রিকস জোটের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে অন্তর্ভুক্তি

সিটি পোষ্ট | প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২১ ১৬:২৬

ব্রিকস

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত জোট ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন ব্রিকস দেশগুলো গঠিত ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট মার্কো ট্রায়ো। নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা খুবই আনন্দের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তিদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশকে তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির মাইলফলক বর্ষে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য স্বাগত জানাচ্ছি। ব্যাংকটির নিয়ম অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্রাজিল সরকারের কাছে ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন দাখিল করলে ঐ দিন থেকেই ব্যাংকটিতে বাংলাদেশের যোগদান নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশের যোগদান নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে ২০১৫ সালে স্থাপিত এ বহুজাতিক ব্যাংকে ব্রিকস জোটের বাইরে এবারই প্রথম কোনো দেশ সদস্যপদ পেল। এ সদস্যপদ বাংলাদেশকে উল্লিখিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করবে। এ সদস্যপদ লাভের ফলে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পাশাপাশি আরো একটি বহুজাতিক ব্যাংকে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত হলো।

 

ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হলো বাংলাদেশ

 

 

 

বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তার চাহিদাও বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়টি উভয়ের জন্য লাভজনক হবে। উন্নয়নকে টেকসই করতে এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উদীয়মান বাজার অর্থনীতির কাতারে উন্নীত হতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তা বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) সূচনাতেই বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল। তখন চীনের উদ্যোগে প্রস্তাবিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে (এআইআইবি) যোগদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর ডিসেম্বরে এক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। এর পরে ব্যাংকটিতে যুক্ত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো এবং নগর উন্নয়ন সংক্রান্ত ৮০টি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ২০১৫ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামের অদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোট এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে। ২০২০ সালের শেষের দিকে এনডিবির বোর্ড অব গভর্নরস সম্ভাব্য সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করার অনুমোদন দেয়। কয়েক দফা আলোচনার পর এনডিবি নতুন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং উরুগুয়ের নাম ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ এনডিবি প্ল্যাটফরমের সুবিধা নিয়ে ব্রিকস ও এনডিবির অন্য সদস্যদের সঙ্গে অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা পেতে পারে। ব্যাংকটি মূলত যাতায়াত, পানি ও পয়োনিষ্কাশন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অবকাঠামো, সামাজিক অবকাঠামো ও নগর উন্নয়ন খাত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ প্রদান করে থাকে। এনডিবির অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার এবং জাতিসংঘের যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র এই ব্যাংকের সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারবে।

 

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্যপদ পেলো বাংলাদেশ

 

এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে আরেকটি নতুন প্ল্যাটফরম তৈরি করা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশেষ করে এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অবকাঠামো বিনির্মাণে এই ব্যাংক ইতিমধ্যে বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এর মতো বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঋণ দিচ্ছে এই আন্তর্জাতিক ব্যাংকটি। সাধারণত বিশ্বব্যাংক যেসব খাত এবং প্রকল্পে অর্থায়ন করছে না তেমন খাত ও প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এই ব্যাংকটি। যেমন :জৈব জ্বালানি, বড় বড় বাঁধ তৈরি এবং পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্রের স্থাপনে অর্থায়ন করেছে। দরিদ্রমুক্ত বিশ্ব এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ। সময়ের ব্যবধানে পশ্চিম দেশ নিয়ন্ত্রিত এ প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় বিশ্বের কাছে হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খবরদারির হাতিয়ার। এমন বাস্তবতায় অর্থনৈতিক এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে উদীয়মান বিশ্বের জোট ব্রিকস। সেই প্রচেষ্টারই বাস্তব প্রতিফলন হয়ে উঠেছে ব্রিকস জোটের এই নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে এককেন্দ্রিক শাসন চলছে এর অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে নতুন আশার আলো জ্বলে উঠেছে নিঃসন্দেহে বলা যায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এ কাঙ্ক্ষিত হিস্যা না পেয়েই মূলত ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো বিকল্প এই অর্থনৈতিক প্ল্যাটফরম প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বেশ ভালো করছে ইতিমধ্যে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব অনেকটা কমতে শুরু করেছে এর প্রভাবে। এক ধরনের নতুন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অভ্যন্তরীণ সংস্কারে আরো উদ্যোগী হয়েছে। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে আরো বড় ভূমিকা পালন করতে চাইছে— সেটা এখন সুস্পষ্ট। তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

 

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হলো বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাংকের একেবারেই বিকল্প না হলেও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আগমনে কিছুটা প্রতিযোগিতা ভাব সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক বছরে। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি ঠিকমতো কাজে লাগাবে আশা করা যায়। বহুদিন আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক বলা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেই সম্পর্ককে আরো গভীর করে তুলেছে নানাভাবে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা সংযোজিত হয়েছে।

বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধরে রাখার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত দেশে পরিণত করতে বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মেধাভিত্তিক উন্নত দেশে পরিণত করতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহু গুণে বৃদ্ধি করা আবশ্যক। একই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সফল করতেও বৈদেশিক অর্থায়ন জরুরি। এ প্রেক্ষাপটে, নতুন এ ব্যাংকটির সদস্যপদ অর্জন করায় বৈদেশিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে আরো অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top