নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আপস নয়: গভর্নর
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২ ১০:২৭

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের তুলনায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবারের মুদ্রানীতিতে। মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন মুদ্রানীতিকে সতর্কতামূলক বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির। তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আপস নেই।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নরের সঙ্গে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের, বিএফআইইউর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান গভর্নরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩ জুলাই। তিনি তাঁর মেয়াদকালে বিভিন্ন পদক্ষেপ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবাহের প্রাক্কলন ছিল ১৫ শতাংশ। মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি সুদহার হিসেবে বিবেচিত রেপোর সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হলো। এর আগে গত ২৯ মে রেপোর সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত করতে আমদানি বিকল্প ফসলের জন্য একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করা হবে। আর বিলাসজাতীয় পণ্য, বিদেশি ফল, অশস্য খাদ্যপণ্য, টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার বাড়িয়ে শতভাগ পর্যন্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাতন্ত্র্যবোধ হারানোর কথা ঠিক নয়। নিজের মতো করেই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁর সময়ে যখন যা প্রয়োজন সে আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়। কেননা, অর্থমন্ত্রী ২০১৮ সাল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণের কথা বললেও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে সীমা বেঁধে দেয়। এমন এক সময়ে সীমা দেওয়া হয়, যখন খেলাপি ঋণ অনেক বাড়ছিল; কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হচ্ছিল। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, গত মে মাসের ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আর মোট আমানতের ৩২ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানত ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা। ফলে মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ দেওয়ার নির্দেশনার প্রভাব ব্যাংকের মুনাফায় পড়বে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কমে যাওয়া, অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায় থেকে পরিদর্শকদের তুলে আনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, পরিদর্শন বন্ধ করা হয়েছে, তেমন নয়। বরং করোনার কারণে ২০২০ ও '২১ সালে সীমিত ছিল। এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে। এর ফল পেতে কিছুদিন সময় লাগবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, বিভিন্ন নীতির ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন অনেক শৃঙ্খলা ফিরেছে।
গভর্নর বলেন, সরবরাহ চেইনে সমস্যার কারণে বিশ্ব চাহিদা ও সরবরাহে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। যে কারণে ২০২১ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তা আরও বেগবান হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরোপ অঞ্চল ও ভারতের মতো অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথ অনুসরণ করছে। মুদ্রানীতির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছলেও মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। তবে অতিরিক্ত তারল্য যেন মূল্যস্ফীতি বাড়াতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তোলা হয়েছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: