রপ্তানি আয়ে দুঃসংবাদ, আমদানিতে কিছুটা স্বস্তি
তানজিমুর রহমান | প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২২ ১৩:২৯

ডলার সংকট ও রিজার্ভের চাপের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার আয় রপ্তানি খাতে দুঃসংবাদ এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রধান খাত আমদানি গত জুলাই মাসে বেড়েছে। তবে আগস্টে সাময়িক হিসাবে কমেছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতের একটি রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর আরও চাপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আমদানি কমায় কিছু স্বস্তি রয়েছে।
এদিকে আগের বকেয়া এলসি ও ঋণের কিস্তি শোধ করায় চাপ বাড়বে। আমদানি ব্যয় মেটাতে ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৬৪৪ কোটি ডলার। আগের সপ্তাহে ছিল ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ডলার।
রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রবৃদ্ধিও।
ইপিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৪২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৯ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি হয়েছে। পাশাপাশি গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ১ হাজার ১০২ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাভার ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ হার নিয়ন্ত্রণে দেশগুলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাচ্ছে। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ভোক্তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি একাধিক খাতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে রপ্তানি আয় কমছে।
ইপিবি সূত্র জানায়, রপ্তানি আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়য়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ৪১ শতাংশ। উৎপাদিত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৯৮ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। এ খাতে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩২ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্র অর্জন হয়নি। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ২৪ কোটি ডলার। হিমায়িত খাদ্য খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার। কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৯ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ২৭ কোটি ডলার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: