ঢাকা | সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
বিআইডিএসের গবেষণা প্রতিবেদন

অতিদরিদ্র্য সবেচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম, একজনও নেই নারায়নঞ্জে

সিটি পোষ্ট | প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৫৬

অতিদরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারি করোনা দারিদ্র্য হ্রাসে সরকারের প্রচেষ্টা ৫ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। অতিদরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায়। এ জেলায় ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ অতিদরিদ্র্য। অতিদরিদ্রের শীর্ষ জেলা হিসেবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থান আছে বান্দরবান এবং দিনাজপুর। অন্যদিকে নারায়নঞ্জ জেলায় অতিদারিদ্র্য এক জনও নেই। অতিদারিদ্রের হার কম এরকম তৃতীয় এবং তৃতীয় জেলা হচ্ছে, মাদারিপুর এবং মুন্সিগঞ্জ। যথাত্রক্রমে শুন্য দশমিক ৯ এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ অতিদরিদ্রের মানুষের বাস জেলা দুটিতে।

অতিদরিদ্র্যদের অর্ন্তভুক্তির চ্যলেঞ্জ -বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের অনুরোধে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস গবেষণাটি পরিচালনা করে। বিআইডিএসের পক্ষে সংস্থার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. জুলফিকার আলী গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। এসময় বলা হয়, দারিদ্রের হার ২০১৬ সালের পর্যায়ে আবার নেমে আসে। ওই বছর দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ শতাংশ। গত বছর জুন পর্যন্ত করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে বিভিন্ন দারিদ্র্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনানামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি দরিদ্র্য মানুষ আছে। তারা নিজেদের দরিদ্র্য তারা ঢেকে রাখে। গরীব হলে তবে এ দেশের দারিদ্র্র্য বেশি দৃশ্যমান। মানুষ দারিদ্র বেশি প্রকাশ করতে চায়। - এটা জাতীয় লজ্জার। এগুলো খুব ভালো করে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়, দেশে পুরুষপ্রধান পরিবারের তুলনায় নারীপ্রধান পরিবারে অতিদরিদ্র্যে হার কম। নারী প্রধান পরিবারে অতিদরিদ্যের হার ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। পুরুষ প্রধান পরিবারে এ হার ১৩ শতাংশ। গড়ে ১২ দশমিক ৯০ পরিবারের বাস অতি দরিদ্র সীমার নীচে।


প্রতিবেদনে ধর্মীয় পরিচয়ে অতিদরিদ্র্যের একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, মুসলিমদে মধ্যে অতিদরিদ্র্য সবচেয়ে কম ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। হিন্দু এবং খৃষ্টাধর্মাবলম্বি আছে ™ি^তীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে। এই ধর্মে অতিদরিদ্রের হার যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯০ এবং ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ বুদ্ধ অতিদরিদ্র্য।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়না। উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত না যাওয়া শিশুর হার ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। শিশু শ্রমে যুক্ত আছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু। ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ কণ্যা শিশুর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের কম বয়সেই।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্কপ্পনাপ্রতিমšúী ড. শামসুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনটি সব দায়-দায়িত্ব লেখকের। সরকারের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের ( জিইডি) এ বিষয়ে কোন দায়-দায়িত্ব নেই। জিইডি শুধু একটি গবেষণা প্রতিবেদন করার জন্য বিআইডিএসকে অনুরোধ করেছে। অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির কারণে দারিদ্র্য কমেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং সড়ক অবকাঠামো প্রকল্প থেকেও সুবিধা পাচ্ছে দরিদ্ররা। বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পই গ্রামকেন্দ্রীক। তিনি বলেন, নগর কেন্দ্রীক দারিদ্র নিরসনেও সরকারের কিছু প্রকল্প আছে, তবে এটা ঠিক যে, সামাজিক সুরক্ষার বেশিরভাগই কর্মসূচিই গ্রামকেন্দ্রীক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দারিদ্র হ্রাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়- এরকম কর্মসূচি এবং প্রকল্পে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

আলোচনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক সূচক কমছে। তিনি বলেন,জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নদী ভাঙ্গন এবং অন্যান্য প্রকৃতিক দুর্যোগে দরিদ্র্য বাড়ছে। জলবায়ু সহন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে দারিদ্র্য হ্রাস। দারিদ্র্র্য হ্রাসে নীতি সমর্থন দরকার। নীতি দুর্বলতার সমালোচনা করে ড. জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষাবৃত্তি ২০০৪ সালে যা ছিল এখনই তা-ই আছে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড.বিনায়ক সেন বলেন,দারিদ্র্য হ্রাসে সরকারের প্রচে®দ্বা ৫ বছর পিছিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। দারিদ্রের হার ২০১৬ সালের পর্যায়ে আবার নেমে গেছে। ওই বছর দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ শতাংশ। তিনি বলেন, গত বছর জুন পর্যšø করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে বিভিন্ন গবেষণায় দারিদ্র্য ২০-২৫-৩০ শতাংশ বাড়ার তথ্য জানানো হয়েছে। জুনের পর অর্থনৈতিক ক্ষতি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর দারিদ্র্য কতটা বাড়লো কিংবা কমলো হালনাগাদ সেই পরিসংখ্যান এখনো নেই। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সরকারের সচিব মামুন -আল- রশীদ, নাসিমা বেগম, শরীফা খান প্রমুখ।

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top