ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

সিইসি এখনই দিশা হারিয়ে ফেলছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২ ১৫:৪০

সিইসি এখনই দিশা হারিয়ে ফেলছেন

বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে উনি এখনই খেই বা দিশা হারিয়ে ফেলছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে কীভাবে কথা বলতে হয় সেই বোধটুকুও তার মধ্যে নেই। সিইসির কথা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের প্রতি সবার আস্থা তৈরি হওয়ার কথা। তাদের কঠোর মনোভাবের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠে সহিংসতা করার সাহস পাবে না। কিন্তু তার বক্তব্যে উলটো ফল হচ্ছে।

রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সিইসি তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্টজনরা সোমবার  কাছে এমন প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তারা বলেন, কাজের মধ্য দিয়ে আস্থা সৃষ্টি করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সেই আস্থাও তৈরি করতে পারেনি। আবার অনেক সময় বক্তব্যের মধ্য দিয়েও আস্থা তৈরি হয়। সে কাজটুকু তারা করতে পারছেন না। তার বক্তব্যে জাতি হতবাক ও বিস্মিত বলে তারা মন্তব্য করেন।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের প্রথম দিন ছিল রোববার। এদিন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপ হয়। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব?’ সিইসির এমন বক্তব্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা সিইসির বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছেন।

এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উনি কী মনে করে বক্তব্য দিয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। উনি একজন সিনিয়র মানুষ, কথাবার্তা বলার আগে চিন্তা করে বলবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু কখন কী বক্তব্য দেন, কী বলেন, কী উদ্দেশে বলেন সেটা উনার ব্যাপার। উনি যা বলেন তা হয়তো উনার দৃষ্টিতে ইতিবাচক। কিন্তু ওই পদে থেকে কথাবার্তা অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করে বলতে হয়। আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন অনেক কথাই বলতাম। কিন্তু আমি এখন যে কথা বলি সেটা তো ওইখানে বসে বলতে পারতাম না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই সেটা উনি প্রমাণ করেছেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে উনি অসহায় ছিলেন। অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা আছে তা অনেক দেশেরই নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উনার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে উনি এখনই দিশা হারিয়ে ফেলছেন। মেরুদণ্ড শক্ত না থাকলে এমন বক্তব্যই আশা করা যায়। উনারা দিন দিন খেলো হয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক পদ। এ পদে থেকে বক্তব্য দেওয়ার আগে অনেক ভেবে নিতে হয়। কারণ তারা যা বলছেন তা সাধারণ মানুষের কাছে একটা বার্তা হিসাবে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সিইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেভাবে কথা বলছেন তা কারও কাম্য নয়। তার বক্তব্যে সবাই হতাশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সহিংসতা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী। নির্বাচন কমিশন একটি দায়িত্বশীল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে রাষ্ট্রের নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত।

কিন্তু নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চাইতে গিয়ে সম্ভাব্য সহিংসতা প্রসঙ্গে যা বলেছেন প্রকারান্তরে তা সহিংসতাকেই উসকে দেয়। সিইসির এমন বক্তব্য নির্বাচনকেন্দ্রিক পেশিশক্তির ব্যবহার, বুথ দখল কিংবা ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে জোরপূর্বক বাক্স ভরাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা দেবেন বলে আশা করি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top