ঢাকা | সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বর

করোনার সামাজিক সংক্রমণের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২ ১৬:১৩

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে না

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে না। ফলে অধিকাংশই শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। সারা দেশে ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর-কাশির রোগী। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছে। এবারের করোনার উপসর্গও এগুলোই।

কিন্তু নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ না থাকায় এদের সবাই আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এদের প্রায় কেউই মাস্ক পরছেন না। জনসমাগম বেশি এমন স্থানে ঘোরাফেরা করছেন। ঘন ঘন হাত ধোয়া বা সামাজিক দূরত্বও রক্ষা করে চলছেন না। এ অবস্থায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এটি নতুন ঢেউ, কোথাও সামাজিক বা গুচ্ছ সংক্রমণ হবে। কোথাও কমবে, কোথাও বাড়বে এমনটা চলতে থাকবে। ফলে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এর আগে নো মাস্ক নো সার্ভিস চালুর কারণে ঢেউয়ের প্রকোপ কমছিল। সে বাধ্যবাধকতা এখন কঠোরভাবে আরোপ করতে হবে।

মঙ্গলবার ২০৮৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ রোগীর। এটা ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রান্ত প্রতিদিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি মাসের ১৩ থেকে ১৯ জুন এক সপ্তাহে ২২১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু এ সময়ে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৫২৭টি। এর পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ২০ থেকে ২৬ জুন আক্রান্ত বেড়ে ৮৮৪৬ জনে দাঁড়ায়। বিপরীতে ৬৬ হাজার ৭৫৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়।

এছাড়া সোমবার ১৩ হাজার ৮২০টি নমুনা পরীক্ষায় ২১০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। যার মধ্য দিয়ে ১৮ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার) ১৩ হাজার ৪৮৯টি নমুনা পরীক্ষা শেষে আরও ২ হাজার ৮৭ জনের দেহে করোনা ধরা পড়েছে।

একাধিক জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, দেশে সরকারিভাবে ৫৬টি এবং বেসরকারিভাবে ১০৫টিসহ ১৬১টি আরটি পিসিআর পরীক্ষাগার রয়েছে। একইভাবে ৫৪টি সরকারি জিন এক্সপার্ট এবং বেসরকারিভাবে তিনটি মেশিন রয়েছে। এছাড়া ৫৪৫টি সরকারি ও ১১৭টি বেসরকারি র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট মেশিনসহ করোনাভাইরাস শনাক্তে মোট ৮৮০টি নমুনা পরীক্ষাগার রয়েছে। যেখানে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। যেখানে দৈনিক অর্ধলাখের মতো নমুনা পরীক্ষা সম্ভব, সেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে, যা অধিদপ্তরের কাজের উদাসীনতা প্রমাণ করে। এতে করে অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েও শনাক্তের বাইরে রয়ে যাচ্ছেন। এরা সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছেন।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার অন্যতম কারণ মানুষ পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন, কিট ও জনবল রয়েছে। এন্টিজেন, আরটি পিসিআর টেস্ট সব ব্যবস্থা আগের মতোই আছে। উসর্গযুক্তদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আনতে সমন্বিত পদক্ষেপ ও প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো দরকার।

জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকের সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বাড়ে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এসব হতে পারে। প্রশ্ন হলো-সাধারণ জ্বর, ডেঙ্গি জ্বর, সর্দি জ্বর ও করোনার জ্বর কোনটি সেটা নির্ণয় করতে পরীক্ষা করাতে হবে। সরকার বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে। এভাবে করোনা পরীক্ষাও ফ্রি করে দিতে পারে। মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। পরীক্ষা বেশি হলে শনাক্ত বেশি হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ কোভিড টেস্ট টিম করা যেতে পারে। এভাবে নমুনা পরীক্ষায় এখনই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, নমুনা পরীক্ষায় মানুষের অনীহা থাকলেও টেস্টের সক্ষমতা কমেনি। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় ব্যবস্থা রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে চিকিৎসকদের। বর্তমানে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ডেঙ্গি এই তিন কারণে জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে গেলেই করোনা টেস্টের পরামর্শ দেওয়া উচিত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, বর্তমানে ভাইরাসটির তীব্রতা ও মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকায় নমুনা পরীক্ষায় অনেকের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারি পলিসি ও মানুষকে সচেতন করতে হবে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রথম দুদিনের মধ্যে এন্টিজেন টেস্ট করালেই পজিটিভ হবে না। নতুন ধরনের পরিবর্তন আসায় সুস্থ হওয়ার পরও করোনা থাকতে পারে। ফলে কখন পরীক্ষা করলে পজিটিভ হতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top