ঢাকা | বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

বন্যায় হবিগঞ্জে প্রায় ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২ ১০:৫১

বন্যায় হবিগঞ্জে প্রায় ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি

হবিগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কালনী, কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া নদীতে পলি জমে যাওয়া ও অপরিকল্পিতভাবে হাওর এলাকায় রাস্তাঘাট, বাঁধ নির্মিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামছে না বলে পাউবো মনে করছে। অন্যদিকে বন্যা কবলিত কোন কোন স্থান থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ভেসে উঠছে। 

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত তিন সপ্তাহ ধরে হবিগঞ্জের ভাটি অঞ্চলসহ ৭ উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক এই বন্যায় শুক্রবার পর্যন্ত কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে। প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ক্ষয় ক্ষতির হিসাব হালনাগাদ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, কালনী, কুশিয়ারা নদীর ভাটিতে পলিমাটি জমা হওয়ায় ও হাওর এলাকায় পানি হ্রাসের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এছাড়া অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চলতি মাসে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করছেন তিনি।

পাউবো সূত্র জানায়, বন্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপালপুরে ২০ মিটার, বানিয়াচঙ্গের সুজাতপুর এলাকায় ৬০ মিটার খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙেছে। অপর দিকে আজমিরিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধের নিকলীরঢালা নামক স্থানে ২০ মিটার, বদলপুর বাজারের নিকটে ১০ মিটার দীর্ঘ এবং নবীগঞ্জের চরগাওয়ে বিবিয়ানা নদীর বাধের ৮০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন মেরামতে প্রায় ২ কোটি টাকা লাগতে পারে।

হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, হবিগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৮ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট । নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির জানান সড়ক মেরামতে ৮২ কোটি ৭৪ লাখ, ৫টি ব্রিজের জন্য ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা দরকার ।

 

বন্যায় ১৫ হাজার ৬শ ২৮ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ধান, ১হাজার ৭৪৩ হেক্টর শাকসবজি, ও ৪৫ হেক্টর অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮৮হাজার ৫৪ মেট্রিক টন ধান ও সবজি এবং ২২৫ মেট্রিক টন অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হয়েছে। জেলায় ১লাখ ৩হাজার ১৩০জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আশেক পারভেজ।

জেলায় ১৭৮টি গবাদিপশুর খামারের ১ হাজার ৩শ ৮টি পশু, ৭৩টি খামারের ৫৪ হাজার ৪৬৭টি হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার টাকার ।

জেলায় ৭ হাজার ৯০১টি পুকুর দিঘি ও খামার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন এতে ৫হাজার ৮শ৫৩ জন খামার মালিকের ১শ ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হয়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল্লাহ জানান, জেলায় ৯৪টি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বন্যা কবলিত হয়। এর মধ্যে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলায় ৯টির মধ্যে ৭টি উপজেলায় ৫৪টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৩৩০টি পরিবারের ৮৩ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসন  সূত্রে জানা যায়, ১৯ হাজার ৩৪৫ জন ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ২৭ হাজার ৫শ  টাকা নগদ, ৮শ মেট্রিক টন চাল,  ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩০ হাজার ৪১৬ প্যাকেট গুঁড়ো দুধ বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৩০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top