ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই তত্ত্বাবধায়ক বাতিল: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৩৪

৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই তত্ত্বাবধায়ক বাতিল: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী লীগ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা বাতিল করেছে। রোববার বিকালে গুলশানে এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এটা হঠাৎ করে বাতিল করেছে তা নয়। সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই তারা কাজটা করেছে। আওয়ামী লীগকে কিভাবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখা যায় সেই নীল নকশার অংশ হিসাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।

গুলশানের ‘সিক্স সিজন’ হোটেলে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরাম’ নামে গবেষণামূলক এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আলম জর্জ এবং মহাসচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলভী। সংগঠনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ও উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, জহুরুল ইসলাম বাবু, পাবনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরশেদ আলম, সচেতন নাগরিক ফোরামের এজেডএম মোরশেদ আল মামুন লিটন, আশরাফুর রহমান, এএইচ আবরার ফাহিম, আবদুল্লাহ জামাল চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিষয়টি আজকে এতটাই প্রাসঙ্গিক সবার দৃষ্টি সেদিকে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও তাদের অস্তিত্ব এ বিষয়টির ওপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগ প্রথম এ দাবি জানিয়েছে। এ দাবি নিয়ে তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। তাদের যুক্তি ছিল দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তাই নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। সেই সময়ের বিএনপি সরকার উপলব্ধি করেছিল দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে এটা জরুরি। তাই সংবিধানে এ বিধানটি যুক্ত করে।

তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতার জন্য ১/১১ হলো। তখন তাদের বড় বড় স্লোগান ছিল মাইনাস টু। আসলে এটা ছিল মাইনাস ডেমোক্রেসি-গণতন্ত্রকে দূরে রাখো, নিয়ন্ত্রিত একটা শাসনব্যবস্থা এখানে পরিচালনা করো। সেই একই সূত্র থেকে একই ষড়যন্ত্র থেকে একই চক্রান্ত থেকে পরবর্তীকালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জন্য নয় জাতির ভবিষ্যৎ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এটা প্রয়োজন। যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলো সেদিনই সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে চিরস্থায়ীভাবে একটা অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল, স্টেবিলিটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। আমি একটা কথা বলাতে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম পাকিস্তান আমলেও এত অত্যাচার নির্যাতন হয়নি। আমাকে ওরা পাকিস্তানের চর-টর বানিয়ে দিল। ওরা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলে, আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ।

বিআরটি প্রকল্পের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুনলাম ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। এই কথা বলার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কারণ এই প্রকল্প তারা নিয়েছেন। তারা ১০ বছর ধরে এই পুরো এলাকার মানুষ, পুরো নর্থ বেঙ্গলের মানুষ, পুরো ঢাকার মানুষকে অসহ্য রকমের একটা যন্ত্রণা দিচ্ছেন যে, যন্ত্রণা কল্পনাও করা যায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালুর কারণ উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, যেকোনো নাগরিক সুপ্রিমকোর্টে প্রশ্ন তুলতে পারেন- যেভাবে যে প্রক্রিয়ায় অবসর গ্রহণের পরে প্রধান বিচারপতি রায় পরিবর্তন করে যে কেয়ারটেকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেটা আইনসম্মত নয়। এটা আইনজীবীরা তুলতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-সংবিধান লংঘন করে আমরা কেয়ারটেকার পদ্ধতিতে যেতে পারি কিনা। আমরা উত্তর হচ্ছে আমরা ১০০ ভাগ পারি। সেই উত্তরটি আমি বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতকে দিয়ে থাকি। তারা যখন ব্যাখ্যা চান তখন আমি তার ব্যাখ্যাটি এভাবে দেই যে, সংবিধান হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top