ঢাকা | বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

১৫ মাস পর গাজায় যুদ্ধবিরতি

ইন্টারনেশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:০৩

অবশেষে হাসি ফুটেছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীর মুখে। কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা প্রস্তাবিত ইসরাইলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

অবশেষে হাসি ফুটেছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীর মুখে। কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা প্রস্তাবিত ইসরাইলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গাজা যুদ্ধ শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি পর্যায়ক্রমিক চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই আলোচনার বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলছে ১৫ মাস ধরে। এই যুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

রয়টার্সকে ওই কর্মকর্তা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারণ করেছে।

এই চুক্তিতে শর্তের মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে ধীরে ধীরে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির কথা নিশ্চিত করে জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে এবং ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দী থাকার পর জিম্মিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের পুনর্মিলন ঘটাবে।’

বাইডেন আরও বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা আমি ২০২৪ সালের ৩১ মে [জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে] তুলে ধরে ছিলাম। উপস্থাপনের পর তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘লেবাননে যুদ্ধবিরতি ও ইরান দুর্বল হওয়ার পরে হামাস যে ব্যাপক চাপে ছিল এবং আঞ্চলিক সমীকরণ যেভাবে বদলে গিয়েছিল, এই যুদ্ধবিরতি কেবল সেটারই ফলাফলই নয়। বরং আমেরিকার দৃঢ় ও কষ্টসাধ্য কূটনীতিরও ফলাফল। এটা সম্পন্ন করার জন্য তাঁদের [কূটনীতিকদের] প্রচেষ্টায় আমার কূটনীতি কখনো থেমে থাকেনি।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় ২৪১ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় বন্দী রয়েছেন। হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন।

সংঘাতের এই ১৫ মাসের মধ্যে শুরুর দিকে একবার মাত্র সাত দিনের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর থেকে কয়েক দফায় যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চাপ বাড়তে থাকে। এ লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে জোর তৎপরতা শুরু করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে শুরু করে আলোচনা।

আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন সূত্র জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল–থানি তাঁর কার্যালয়ে আলাদাভাবে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।

 

২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলো। হোয়াইট হাউসের গদিতে বসার আগেই তিনি এই যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে তৎপর হয়েছিলেন। বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের বিষয়ে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি। শিগগিরই তাঁরা মুক্তি পাবেন। ধন্যবাদ!’

যুদ্ধবিরতির এই চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে সূত্রের বরাতে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চুক্তিতে মোট ছয়টি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। তখন বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। তখন থেকে গাজায় স্থানীয় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে এবং সামরিক বাহিনীকে উপত্যকাটি থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল। এরপর তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা নিহত জিম্মিদের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং মিসরের তত্ত্বাবধানে গাজা পুনর্গঠন শুরু হবে।

যুদ্ধবিরতির খবর সামনে আসার পর গাজার বাসিন্দাদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। মধ্য গাজার দেইর আল–বালাহ ও অন্যান্য এলাকায় জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। আনন্দে তাঁরা একেঅপরকে জড়িয়ে ধরেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেককে মুঠোফোনে ছবি তুলতে দেখা যায়।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top