তৃতীয় মেয়াদে নেতৃত্বে
চীনকে বিশ্বের প্রয়োজন, বিশ্বকেও চীনের প্রয়োজন: শি জিনপিং
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৫২

গণপ্রজাতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের পর দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হিসাবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) ২০তম কংগ্রেসে তৃতীয় মেয়াদে দলের নেতৃত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেন, বর্তমানকালে চীনকে বিশ্বের খুব প্রয়োজন। বিশ্বকেও চীনের প্রয়োজন। খবর বিবিসি ও এএফপির।
রোববার বেইজিংয়ে গ্রেট হলে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে ২০০ জ্যেষ্ঠ নেতাকে নিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে কংগ্রেস। এরপর তারা দলের সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করেন। শি জিনপিংকে তারা তৃতীয় মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। এ সময় পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সাত সদস্যকেও নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন-শি জিনপিং, লি কিয়াং, ঝাও লেইজি, ওয়াং হুনিং, কাই কি, ডিং জুয়েজিয়াং ও লি জি মিট। এর মধ্যে চারজন নতুন সদস্য। এ কমিটিতে সির ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মিত্র রয়েছেন। সাবেক সাংহাই কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান লি কিয়াং আগামী মার্চে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পেতে পারেন। মার্চে সরকারের বার্ষিক আইনসভার অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের তৃতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে সি চিন পিংয়ের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে কারও দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকার নিয়ম বাতিল করে দেন। এতে অনির্দিষ্টকাল তার ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হয়।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সি চিন পিংকে আবারও পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। নির্বাচিত হওয়ার পর গণমাধ্যমের উদ্দেশে সি বলেন, বিশ্বকে ছাড়া চীন উন্নতি করতে পারবে না। আবার বিশ্বেরও চীনকে প্রয়োজন। কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৪০ বছরেরও বেশি সময় পর আমরা দুটি অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছি। এর একটি হলো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক স্থিতিশীলতা। ২০তম কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে তিনি অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও জিরো কোভিড নীতির মতো দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলায় তার দলের অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর জনগণ যে আস্থা রেখেছে তার জন্য আমি পুরো পার্টিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কমিউনিস্ট পার্টি এবং মানুষ যে আস্থা রেখেছে তা প্রমাণ করার জন্য দাযিত্ব পালনে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। সিসিপির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা ৬৯ বছর বয়সি সি চিন পিং একইসঙ্গে দল ও চীনের সামরিক বাহিনীর প্রধান। কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সময়কার মাও সেতুংয়ের পর তিনিই হলেন সবচেয়ে শক্তিধর নেতা। ১৯৭৬ সালে মাও সেতুং মারা যান।
নতুন পলিটব্যুরোতে কোনো নারী নেই : কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নায় বড় রকমের পালাবদল ঘটেছে। অধিবেশনে ২০৫ জন সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বাদ পড়েছেন সেকেন্ড ইন কমান্ড দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি ক্যাছিয়াং। কমিটিতে নেই প্রভাবশালী ওয়াং ইয়াংও। সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে স্থান পাননি কোনো নারী। ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কমিটিতে কোনো নারী জায়গা পাননি। এর আগে পলিটব্যুরোতে একমাত্র নারী সদস্য ছিলেন সান চুনলান। ৭২ বছর বয়সি সান অবসর নেওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি কোনো নারী সদস্যকে পলিটব্যুরোর সদস্য হিসাবে নেওয়া হয়নি।
শি জিনপিংকে অভিনন্দন পুতিন ও উনের : তৃতীয় মেয়াদে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন। রোববার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিকে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় পুতিন বলেন, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে একটি ব্যাপক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অব্যাহত রাখতে তিনি উন্মুখ। শি ও পুতিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তারা পরস্পরকে একাধিকবার ‘সেরা বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেছেন। ১০ বছরে তাদের মধ্যে ৪০ বার সাক্ষাৎ হয়েছে।
তৃতীয় মেয়াদে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় শি জিনপিংকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম উন জংও অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার বরাতে এএফপি এ খবর জানায়।
শি জিনপিংকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন : চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। অভিবন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিঃসন্দেহে আপনার পুনর্নির্বাচন আপনার নেতৃত্ব, সাফল্য ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর চীন এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের আস্থার একটি উপযুক্ত স্বীকৃতি। সিপিসির ২০তম কংগ্রেসের সফল সমাপ্তির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, সিপিসির প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে একটি মধ্যপন্থি সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করা। এই টার্গেট নিয়েই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১২ সালে সিপিসির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। তিনি বলেন, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক নীতি, জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ার পথে চীনকে একটি নতুন যাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার সংকল্প ও নির্দেশনার তারিফ করি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন আকাক্সক্ষার প্রতি আপনার অব্যাহত সমর্থনের প্রশংসা করি। আমার বিশ্বাস- আপনি এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও অবদান রাখবেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় ২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সফরকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ রূপান্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৯ সালে চীন সফরকালে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শি জিনপিংয়ের অব্যাহত সাফল্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেস অধিবেশনে তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শি জিনপিং।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: