ইসরায়েলি বর্বরতা
গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি বোমাবর্ষণ:নিহত ৮০০
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:১৫

ফিলিস্তিনের গাজায় এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির পর গত শুক্রবার থেকে আবার শুরু করা ভয়াবহ আক্রমণ গোটা উপত্যকায় বিস্তৃত করেছে ইসরায়েল। এতে গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসসহ সব খানে বোমা হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে তারা। ইউনিসেফ বলছে, প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি করে বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। এতে গোটা গাজায় একটু জায়গাও নিরাপদ নেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত চার দিনের টানা বর্বর হামলায় হাসপাতালগুলোতে লাশের বন্যা হয়ে গেছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
সোমবার একের পর এক অসংখ্য মৃতদেহ এসেছে হাসপাতালে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ বলেছেন, ‘আমরা মৃতদেহের স্রোতে প্লাবিত হয়েছি। আমাদের হাসপাতালগুলো আহত ও অসুস্থ রোগীদের আর কোনো চিকিৎসাই দিতে পারছে না। সব চিকিৎসা সরঞ্জাম ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে।’ গাজায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গাজায় হামাসের কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে তারা গোটা গাজায় হামলা বিস্তৃত করেছে। আইডিএফের প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, সেনারা এখন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ‘মুখোমুখি’ লড়াই করছে।
সোমবার সকালে গাজাবাসীকে গাজার কেন্দ্রস্থলের অন্তত ২০টি এলাকা থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নতুন আদেশ জারি করেছে ইসরায়েল। কিন্তু এর আগে উত্তর থেকে দক্ষিণের খান ইউনিসের এসব এলাকায় ঠাঁই নিয়েছিলেন তারা। এখন আবার অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশে আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
নতুন এই নোটিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। মানচিত্রে দক্ষিণ ও পশ্চিমের কোন কোন এলাকায় সরে যেতে হবে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা বলছেন, নির্দেশনা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। কারণ, ভঙ্গুর ইন্টারনেট সংযোগের কারণে তারা তথ্য পাচ্ছেন না।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের একজন মুখপাত্র ড. জেমস এল্ডার বলেছেন, তিনি শিশুদের আঘাতের ভয়াবহতা বর্ণনা করার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। দক্ষিণ গাজায় যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলা হচ্ছে। প্রতি ১০ মিনিটে একটি বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েল। তাই এখানে কেউ নিরাপদ বোধ করছে না।
তিনি বলেন, ‘মানুষ হাসপাতালে যেমন নিরাপদ নয়, আশ্রয়কেন্দ্রেও অনিরাপদ।’
আবারও তেল আবিবের দিকে রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। এ-সংক্রান্ত ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, গাজা থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ব্যারাজ তেল আবিবের ওপরে আকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। হামাস বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জবাবে এই হামলা।
গাজায় হামাসের ব্যবহৃত প্রায় ৮০০টি ‘টানেল’ পাওয়ার দাবি করেছে আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় বসতে ইসরায়েল ও হামাসকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটির কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়কারী জন এফ কিরবি বলেন, ‘আমরা এখনও কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি, যাতে তাদের আলোচনায় ফিরিয়ে অবস্থার কোনো পরিবর্তন করতে পারি কিনা।’
এদিকে, এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘সমাধান শুধু রাজনৈতিক হতে পারে। পৃথক দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।’
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজের ওপর ফের আক্রমণ করেছে। ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিশালী গোষ্ঠীটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থামাতে অস্বীকার করলে আরও হামলা চালানো হবে।
গত রোববার হুতিরা একযোগে একাধিক জাহাজে হামলা চালায়। মার্কিন সেনাবাহিনী বলছে, তারা উপযুক্ত জবাব দেবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: