ঢাকা | শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ধরা ছোয়ার বাইরে মাদ্রাসা ছাত্র রুবেলের খুনি হৃদয়

শরীয়তপুর প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২২ ১৪:২৭

পালং থানায় ছেলে হত্যার আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানাতে  আসেন আনোয়ারা বেগম


একমাত্র ছেলে রুবেলকে হারিয়ে পাগলপ্রায় দরিদ্র মা। সাড়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ছেলের খুনি ধরা ছোয়ার বাইরে। বিচার পেলেও আসামী গ্রেফতার হয়নি। ছেলে হারানো শোক ও যাতনা কাউকে বলতেও পারেন না। এ কষ্ট যেনো ফুরাবার নয়।


মধ্য বয়সী নারী আনোয়ারা বেগমকে দেখা গেলো শরীয়তপুরের পালং থানায়। পুলিশের কাছে হাত জোড় করে আকুতি-মিনতী করে কি যেনো বলে আসলেন। বের হয়ে আসার সময় জানালেন একমাত্র ছেলেকে দুর্বিত্বের হাতে খুন হতে দেখেছেন সাড়ে ৩ বছর আগে। মামলার পর বিচারও হয়েছে। কিন্তু আসামীদের কেউই গ্রেফতার হয়নি।


তিনি বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ছেলের উপার্জনে সংসার এ আসবে সচ্ছলতা। ঘুচবে দুঃখ কষ্ট। কিন্তু সেই ছেলেকে আকলে হারিয়ে দুই মেয়েসহ অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন তিনি। ছেলেকে হারিয়ে আজ দিশেহারা তিনি। তার চোখের পানি যেনো আর শোকাবার নয়।

থানা আসা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ছেলে হত্যায় সাজা প্রাপ্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানাতে পুলিশের কাছে এসেছিলেন এই মধ্য বয়স্ক নারী।


জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দিন দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় মাদ্রাসা ছাত্র রুবেলকে। এরপর ১৫ জনকে বাদি করে শরিয়তপুর ইসলামী কামিল মাদ্রাসায় উপ-প্রিন্সিপাল সুবেদ আলী শরীয়তপুরের পালং থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে বেসরকারী সংস্থা নারী বিকাশ কেন্দ্রের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ ইমরান হাসান হৃদয়কে প্রধান আসামী করা হয়। মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে।


পালং থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর পালং থানায় হত্যা মামলা (নং-৭৮) করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ উল্লেখিত আসামীদের অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ চার্জসীট দায়ের করে। এরপর দীর্ঘ সময় অভিযুক্ত আসামীরা আদালতে অনুপস্থিত থাকেন। এরপর আদালত এই রায় দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এস.এম. আশরাফুজ্জামান বলেন, আসামিদের ধরার বিষয়ে প্রথম থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তাদের খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের বাসা বাড়ি ও এলাকাতে আমাদের গোয়েন্দা লাগানো রয়েছে। কোন প্রকার ক্লো পেলেই পুলিশ এদেরকে গ্রেফতার করবে। এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছে না জানিয়ে তিনি আশা করেন, খুব দ্রুত হৃদয়সহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

 

উল্লেখ, মাদ্রাসা ছাত্র হত্যা মামলায় প্রধান আসামী হৃদয়কে দন্ড বিধি ১৪৩, ৩০৭, ৩২৩ ও ২৯৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস জেল হাজতের রায় দিয়েছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত-১, শরীয়তপুর। এছাড়া অন্য আসামীদের মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বাকীদের সবাইকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত।

ছবিতে পলাতক হৃদয়, ইনসার্টে খুন হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র রুবেল
এ বিষয়ে নিহত রুবেলের বাবা আয়নাল মুন্সী বলেন, তারা এই বিচারে সন্তুষ্ট নন, আসামির মৃত্যুদন্ড কামনা করেছিলেন। তবুও আদালতের রায়কে তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আসামীরা কেউই ধরা না পড়ায় মনোকষ্টে দিনানিপাত করছেন।

 


এ প্রসঙ্গে মামলার রায়ের পর বাদী পক্ষের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান জানান, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এই রায়ের মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে দেশে এখনো আইনের শাসন রয়েছে। কারন যেভাবে ভর-দুপুরে একজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তা নজীরবিহীন। এর সুুষ্ঠু বিচার না হলে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়ে থাকতো। তবে এখনো আসামী গ্রেফতার হয়নি। তিনি আসামীদের দ্রত গ্রেফতারের জোড় দাবী জানান।

 


আইনজীবী তৌহিদুর রহমান আরও জানান, প্রধান আসামী হৃদয় বিরুদ্ধে আরও একটি ধর্ম অবমাননার মামলার রায় হয়েছে ২০১৯ সালের অক্টোবরে। ওই মামলায় তার ১০ বছরের কারাদন্ড হয়েছিল। দুইটি মামলাতেই তার মারামাল ক্রোকসহ ওয়ারেন্ট বাহির হয়েছে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top