ঢাকা | মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

রমজানের প্রস্তুতি নিন শাবান মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪২

রমজানের প্রস্তুতি নিন শাবান মাসে

বছর ঘুরে আমাদের পঙ্কিলতার গ্লানি মুছে পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দেয় রমজান। রমজানের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য শাবান মাস।

 

এ মাসের পূর্ণ নাম হচ্ছে ‘আশ শাবানুল মুয়াজ্জাম তথা মহান শাবান মাস’। এ মাসে রাসূল (সা.) বেশি বেশি ইবাদত পালন করতেন। অথচ আজ আমাদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করতে ব্যস্ত হয়ে যায় ব্যবসায়ীদের কিছু মহল।

এমনকি ভোক্তাদের অনেকেই রোজায় খাবারের পসরা সাজাতে প্রস্তুতি নেন শাবান মাসেই। অথচ এ মাস হাতছানি দিয়ে ডাকে রবের নৈকট্য অর্জনে। কেউ ফিরে আসে, কেউবা ভাবে এত পাপ করেছি, ক্ষমা পাওয়ার পথ হয়তো আমার জন্য খোলা নেই।

প্রিয় বন্ধুরা! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা যুমার, আয়াত নং ৫৩।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবানের পূর্ণ মাসই রোজা রাখতেন। তিনি শাবানের রোজা রাখতেন, তবে অল্প কিছু দিন (রাখতেন না)। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, বায়হাকি, মিশকাত, মুসনাদে আহমাদ)। তাই এ মাসে রোজার প্রস্তুতি হিসাবে আমাদের উচিত রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা।

এ মাসে রয়েছে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান, আমাদের সংস্কৃতিতে যাকে বলা হয় শবেবরাত। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৯০।

তাছাড়া রাসূল (সা.) প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। যাকে বলা হয় আইয়ামে বিজ। এ তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। এর মধ্যে শাবানের রজনি তথা শবেবরাত তারই অন্তর্ভুক্ত। তবে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের শবেবরাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রে সুন্নত সমর্থন করে না।

রমজানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। আমরা সাধারণ মানুষ অনেক সময় ইমাম সাহেবকে বলি, হুজুর দ্রুত পড়ুন। কারণ আমরা নিজেরা বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত যেমন শিখি না, তেমনি আমাদের মাতৃভাষায় না হওয়ায় তা অনুধাবনও করি না। অথচ কুরআন শুধু একটি গ্রন্থ বা ধর্মগ্রন্থই নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। রমজান মাসেই অবতীর্ণ হয় এ মহাগ্রন্থ আল কুরআন।

আসুন আমরা কুরআন তেলাওয়াত শিখি; অল্প করে হলেও অনুবাদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। এ মাসকে কেন্দ্র করে যা হতে পারে আমাদের রমজানে তারাবির নামাজে একাগ্রতার প্রতীক। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো রোজা। রোজা ফারসি শব্দ। সাওম হলো তার আরবি প্রতিশব্দ, যার অর্থ বিরত থাকা। অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যাবতীয় গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা।

এ রোজা পূর্ববর্তী নবিদের ওপরও ফরজ ছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা খোদাভিরু হতে পার।’ (সূরা বাকারা-১৮৫)।

রোজার বিনিময় সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)। দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজে অনেকেই শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামের এ বিধান পালনে উদাসীনতা দেখান।

তাদের জন্য এ মাস থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কেননা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া একটি রোজা পরিত্যাগের শাস্তি একাধারে ৬০টি রোজা রাখা; যা পালন করা আরও অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

এ মাসে আমাদের প্রস্তুতি যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন; যাতে আমাদের রমজানের প্রস্তুতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হয়, আমরা যেন অতিরঞ্জিত কিছু করে না ফেলি, যা সুন্নতের পরিপন্থি।

 

 
 
 
 
 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top