পদ্মাসেতুর আইনী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ’গোলকধাঁধা’
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২ ০৫:২১

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিন রোববার সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ২ যুবক। দুর্ঘটনার পর যোগাযোগ করা হয় সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু উত্তর থানায়। উত্তর থানা পুলিশ ফোন না ধরায় যোগাযোগ করা হয় মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে।
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত এসপি সুমন দেব জানান, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন ২৬-২৭ নম্বর পিলারের মাঝে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এটা তাদের অধীনে নেই, এটা এখন পদ্মা দক্ষিণ থানার বিষয়। তিনি পদ্মা দক্ষিণ থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা পড়েছে শরীয়তপুর জেলায়।
ফোন করা হয় পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায়, যোগাযোগ করে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম মিজানুর রহমানকে।
তিনি বলেন, সেতুর যে পিলারের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা শিবচর থানা, মাদারীপুর জেলায়। তিনি মাদারীপুর জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেনও বলেন, দুর্ঘটনাটি যেহেতু সেতুর ওপরে ঘটেছে তাই এটা পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা তদন্ত করবে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক পদ্মা সেতুর কোন অংশ কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধীনে।
সেতুর ১ নম্বর পিলার থেকে ১৬ নম্বর পিলার পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলায় এবং এটা পদ্মা সেতু উত্তর থানার অধীনে। ১৭ নম্বর পিলার থেকে ৩১ নম্বর পিলার মাদারীপুরের শিবচরের অংশ। ৩২ নম্বর পিলার থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত শরীয়তপুরের অংশ। তবে ১৭ থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত পদ্মা দক্ষিণ থানা দেখভাল করবে।
আবার যদি সেতুর নিচে পানিতে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা দেখভালের দায়িত্ব নৌ-পুলিশের।
যোগাযোগ করা হলে শরীয়তপুর মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, ১৭ নম্বর থেকে ৪২ নম্বর পিলারের নিচে হলে এটা তাদের আওতায়। তারা এটা দেখভাল করবে। আবার ১ নম্বর থেকে ১৬ নম্বর পিলারের নিচের পানিতে হলে সেটা দেখবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি।
সেতুর সংযোগ সড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার দেখভাল করবে হাইওয়ে পুলিশ। সেক্ষেত্রে মামলা নেবে জেলা পুলিশ এবং ক্রাইমসিন তদন্ত ও আলামত সংগ্রহ করবে সিআইডি।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প চলাকালীন প্রকৌশল সহায়তা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
যেকোনো অপরাধ সংঘটনের কোনো তথ্য পেলে এলিট ফোর্স হিসেবে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
সেক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর এলাকায় কোনো অভিযান পরিচালনা করলে সেটা করবে র্যাব ১১। র্যাব ১১ এর আওতায় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা (ঢাকা মহানগর এলাকা ব্যতীত)। তবে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের পর যেহেতু জেলা পরিবর্তন হয় সেক্ষেত্রে ১৭ নম্বর পিলার থেকে অভিযান করতে পারবে র্যাব ৮।
র্যাব ৮ এর অধীনে পড়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, রাজবাড়ী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।
পদ্মা সেতুর রেললাইন চালু হওয়ার কথা আগামী মাসের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। সেক্ষেত্রে রেল চালু হলে রেললাইনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার দেখভাল করবে রেলওয়ে পুলিশ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল হক বলেন, 'পদ্মা সেতু প্রকল্পের রেললাইন চালু হওয়ার পর রেললাইনে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার তদন্ত করবে রেলওয়ে পুলিশ। রেললাইন ও এর দুপাশের ১০ ফুট পর্যন্ত এলাকা রেলওয়ে পুলিশের অধীনে।
যেহেতু পদ্মা সেতু এলাকায় কোনো রেলওয়ে পুলিশের থানা হয়নি, সেহেতু পদ্মা সেতুতে রেল চালু হলে এবং নতুন থানা না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ সেটা দেখভাল করবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: