ঢাকা | শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
রাসেল ছাড়া কেউ জানেন না, তিনি তা ভুলে গেছেন

ইভ্যালির পাওনাদারদের টাকা আটকে আছে 'পাসওয়ার্ডে'

তানজিমুর রহমান | প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২ ১০:৩১

ইভ্যালির পাওনাদারদের টাকা আটকে আছে 'পাসওয়ার্ডে'

বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পাওনাদারদের টাকা এক পাসওয়ার্ডেই আটকে আছে। বারবার ধরনা দিয়েও ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেলের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে পারেনি পরিচালনা পর্ষদ। ইভ্যালির কাছে এখন প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। পাওনাদারদের তথ্য না পাওয়ায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য থাকলেও তা দেওয়া যাচ্ছে না। এর ব্যাংকে যে টাকা আছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের পাওনা মেটানো সম্ভব নয়।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট কর্তৃক গঠিত ইভ্যালির বর্তমান নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

তিনি বলেন, ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। দুটি ওয়্যার হাউসে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে। অ্যামাজন কোনো সহযোগিতা করেনি। পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় ইভ্যালির সার্ভারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারী আনতে না পারলে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ অসম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বোর্ডের বর্তমান এমডি ও সাবেক অতিরিক্তি সচিব মাহবুব কবীর মিলন, আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মো. শামীম আজিজ, এফসিএ অ্যান্ড এফসিএমএ’র সাবেক চিফ চার্টার্ট অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ।

ইভ্যালির বর্তমান নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ইভ্যালির দুই ধরনের পাওনাদার রয়েছে। যারা সাপ্লাইয়ার আর যারা ক্লায়েন্ট। এখানে সাপ্লাইয়ারদের পাওনা বেশি। বর্তমানে ইভ্যালির যে সম্পদ রয়েছে, তাতে পাওনাদারদের সন্তুষ্ট করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, ঢাকার সাভারে ইভ্যালির দুটি ওয়্যার হাউসে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া নয়টি ছোট পুরাতন কাভার্ডভ্যান ও ৫টি গাড়ি পেয়েছি। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আমরা যা পেয়েছি তা পাওনাদারদের টাকার তুলনায় কিছুই না, এটা সমুদ্রের মতো। পাওনাদের টাকা পরিশোধ অনেকটা এক ফোঁটা পানির মতো অবস্থা।ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন বলে হাইকোর্টে একটি আর্জি দিয়েছেন। তারা যদি বিনিয়োগকারী আনতে পারেন তবেই কোম্পানি চলবে এবং পাওনাদাররাও টাকা পাবে। 

ইভ্যালির সার্ভারের এক্সেস না থাকায় দেনা-পাওনা ও লেনদেনের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিচারপতি মানিক বলেন, আমরা ইভ্যালির সার্ভারটি অপারেট করার অনেক ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটির পাসওয়ার্ড আমাদের কাছে নেই। পাসওয়ার্ড জানতে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা জেলে গিয়ে রাসেলের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি লিখিত দিয়েছেন, ‘পাসওয়ার্ডটি তার মনে নেই। এটি তার ডেস্কের ড্রয়ারে একটি কালো ডায়েরিতে রাখা’। এরপর আমরা দেশের এটুআই, সিআইডিসহ একাধিক আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বসে পাসওয়ার্ডটি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সার্ভারটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা শুধু একটি কথাই বলেছে ‘পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়’।

ইভ্যালির বর্তমান এমডি মাহবুব কবীর মিলন বলেন, আমরা ইভ্যালির আইটি প্রধান তানভিরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের বলেছেন, রাসেল গ্রেফতারের আরও দুই মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, তখন আইডি পাসওয়ার্ড সব রাসেলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরে তার আগের পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করে দেখেছে এক্সেস সম্ভব হয়নি, তার মানে রাসেল পরে আবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন। 

তানভিরের অধীনে যারা কাজ করতেন তারাও পাসওয়ার্ডের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি বলেও জানান ইভ্যালির নতুন এমডি।

এদিকে ইভ্যালির অডিট শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, হাইকোর্ট আমাদের অডিট শেষ করার জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা হুদা-ভাসি নামক এটি অডিট ফার্মকে অডিটের দায়িত্ব দিয়েছি। ২৭ লাখ টাকায় তারা অডিট করছে। তারা বলেছে অডিট শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জুলাইয়ে শেষ করবে অডিট। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।

সার্ভারের এক্সেস ছাড়া গ্রাহদের লেনদেনের তথ্য কীভাবে অডিট হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইভ্যালির বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ইভ্যালির যত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে সেসব ব্যাংকে ট্রানজেকশনের স্টেটমেন্ট দিতে বলেছি। তারা আমাদের লেনদেনের সব স্টেটমেন্ট দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ট্রানজেকশন হয়েছে নগদে। নগদে লাখ লাখ ট্রানজেকশনের তথ্য আমরা পেয়েছি। তারা হার্ডকপি দিতে পারেনি। সফট কপি দিয়েছে। এ ছাড়া ইভ্যালির কার্যালয়ে আমরা ঢোকার পর অনেক ডকুমেন্টস পেয়েছি। এসবের ভিত্তিতেই অডিট চলছে। অডিট রিপোর্টে সার্ভারের তথ্য না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকবে।

আমাদের হাইকোর্ট অডিট রিপোর্টের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা তা হাইকোর্টে সাবমিট করব। তারপর হাইকোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন- উল্লেখ করেন মানিক।

facebook sharing button



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top