৭ বিলিয়ন ঋণ সহায়তা
বিশ্বব্যাংকের সাড়া নেই, আইএমএফ ও এডিবি’র সম্মতি
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৫০

বিশ্বব্যাংকের সাড়া নেই, আইএমএফ ও এডিবি’র সম্মতি
দাতা সংস্থাগুলোর কাছে সরকার বাজেট সহায়তা হিসাবে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এরমধ্যে আইএমএফ ও এডিবি’র কাছ থেকে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের নীতিগত সম্মতি পাওয়া গেছে। আগামী মাসে চূড়ান্ত হবে আইএমএফ’র ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বিষয়টি। ১০০ কোটি ডলার ঋণের ব্যাপারে এডিবির সম্মতি মিলেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এখন ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের সাড়া পাওয়া যায়নি। আর জাইকা’র সঙ্গে ঋণ নিয়ে বৈঠক হলেও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এখনো পাঠানো হয়নি। তবে জাইকার কাছে অনানুষ্ঠানিক ৫০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পোর্টফলিও রিভিউ মিটিং। দুদিনব্যাপী এ মিটিং শেষ হবে আজ। বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ওই বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা হবে। এরপরও সেখানে অনির্ধারিত আলোচনায় ঋণ সহায়তার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
জানতে চাইলে ইআরডি সচিব শরিফা খান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তার জন্য যে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো কিছুই জানায়নি। তবে আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান মেহেরীন এ মাহবুব কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে পোর্টফলিও রিভিউ মিটিং সম্পর্কে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘সেখানে মূলত চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এতে পাইপলাইনে থাকা অর্থের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে জটিলতা চিহ্নিত করে আলোচনা চলছে।’
চলতি অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট পূরণ করতে বিদেশি ঋণ সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১.৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার। এছাড়া সম্প্রতি জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনা নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে আইএমএফের কাছে যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য সরকার আবেদন করে তাতে সংস্থাটি ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবল ট্রাস্ট (আরএসটি)’ থেকে এই অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে।
এডিবির কাছে সরকার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। ইআরডি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে এডিবি’র কাছে। এ ব্যাপারে সংস্থার কাছ থেকে নীতিগত সম্মতি পাওয়া গেছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি।
সূত্র অরও জানায়, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে এ পর্যন্ত ১২৫ কোটি (১২৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নতুন ঋণের অঙ্ক ১০০ কোটি ডলার। আর আগের প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া মেলেনি। আবেদন পাঠানোর প্রায় ২ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে।
ইআরডি সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) করোনা সংকট পুনরুদ্ধারে নেওয়া কর্মসূচিতে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক। এরমধ্যে ছাড় করেছে ২৫ কোটি ডলার। বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় করার কথা। সেই ২৫ কোটি ডলার অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছাড় করার জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে বিষয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইআরডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলমান সংকট মোকাবিলায় শুধু বাজেট সহায়তা নয়, বিকল্প পথও খোঁজা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পাইপলাইনে থাকা প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। যেসব প্রকল্পে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ আছে সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: