ঢাকা | বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের মামলায় মৃত-বিদেশে থাকা ব্যক্তিও আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩২

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের মামলায় মৃত-বিদেশে থাকা ব্যক্তিও আসামি

তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মুন্সীগঞ্জ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি, মৃত ও বিদেশে থাকা ব্যক্তিও মামলার আসামি হয়েছেন।

মামলায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু পুলিশের দেওয়া মামলায় আসামি হলেন। তাদের এজাহারে ২ ও ৩নং আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে তাদের হাতে থাকা ইটপাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মিনহাজ উল ইসলামের মাথার বাম পাশে গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনেন মামলার বাদী এসআই মাইন উদ্দিন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে পুলিশের  অনুমতি নেয়া বিএনপি কর্মসূচিতে আমি প্রধান অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলাম। সভার প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা ভালো মনে হয়নি। এর পরও নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। আমরা পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী সভা শুরুর আগেই পুলিশ মিছিল থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয় এবং লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

তিনি বলেন, মামলার ধরন দেখে বোঝা যায়- বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকা ও বাড়ি ছাড়া করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এতে বিএনপির কোন নেতা কর্মী জড়িত নয়।

তিনি আরও বলেন,একটি বিশেষ মহল এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম ধরে ধরে মামলা নেয়া হয়েছে। একদিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন- বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, দমননীতি চালাবে না; অন্য-দিকে পুলিশের আচরণে মনে হয় দেশটাকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গণতন্ত্রের পথ বন্ধ করে এক দলীয় শাসন কায়েম করে দেশবিরোধী বাকশালের পথে হাঁটছেন।

আবদুস সালাম আজাদ বলেন, দেশে আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে প্রশাসন এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারত না।

এদিকে মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হাজারও বিএনপি নেতাকর্মী। এজাহারে নাম না থাকায় অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসলেও গ্রেফতার এড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তাদের ধারণা- এজাহারের নাম না থাকলেও গ্রেফতার করে অজ্ঞাতদের তালিকায় গ্রেফতার দেখাবে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ ঘটনা ও মামলার ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা বিএনপির আহবায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে গুলি করার দৃশ্য বলে দেয় বিএনপি নয় একটি বিশেষ মহল এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া এবং এলাকাছাড়া করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই হামলা এবং মামলার ঘটনা ঘটায়।

মামলার এজাহারে এমন অনেক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে যাদের মধ্যে অনেকে দেশে নেই, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে এমনকি সমাবেশে আসেনি। সমাবেশটি ছিল সদর থানায়, মিরকাদিম ও মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপি শাখার উদ্যোগে। সমাবেশে অন্য কোনো উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেনি, অথচ উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতার নাম রয়েছে মামলায়।

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায়  মামলা থেকে বাদ পড়েনি মৃত ব্যক্তির নামও। এমন কি ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন এমন নেতাও মামলার আসামি হয়েছেন কয়েকজন।

অধুনা বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাচ্চু গত ১৯ মার্চ মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার ছয় মাস পর গত ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা মামলায় ২৫৫নং আসামি করে তার বিরুদ্ধেও মামলা দেয় পুলিশ।

এ ব্যাপারে তার ছেলে ফখরুল ইসলাম আপেল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমার বাবার মৃত্যু পর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে,  এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে।

তিনি আরও জানান, বাবা জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছে, মামলা খেয়েছে কষ্ট পাইনি, এ সরকার এতটা বেসামাল হয়ে পরেছে যে, মামলা দিতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকেও আসামি করতে হয়েছে।

অপরদিকে টঙ্গীবাড়ী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক  ২৬০নং আসামি খান মনিরুল মনি পল্টন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে জাপানে অবস্থান করছেন। এছাড়া ৫২নং আসামি আব্দুস সালাম মিজি, ১২২ নং আব্বাস আলী, ১৮৮ নং মো. আলামিন চুন্নু সমাবেশে আসেননি।

উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে বিএনপির মিছিলে বাধা দেওয়া নিয়ে বুধবার পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের মুহুর্মুহু শটগানের গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপে মুক্তারপুর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনসহ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে।

এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ উল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামানসহ ২৫ পুলিশ সদস্য ও চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top