ঢাকা | সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
তৎপর নির্বাচন বর্জনকারী সব দল

আন্দোলনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১২

বিএনপির সমাবেশ [ফাইল ছবি]

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ যতই এগিয়ে আসছে ততই নানা কৌশলে এগোচ্ছে বর্জন করা বিএনপিসহ ৬৩ রাজনৈতিক দল। বাম, ডান, মধ্যপন্থি ও ইসলামি এসব দলগুলো আন্দোলন সফল করতে আরও কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। করণীয় নির্ধারণ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভার্চুয়ালি অথবা সরাসরি বৈঠকও করছেন তারা। সেখানে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। একই দাবিতে এক মঞ্চে নয়, যুগপৎ ধারায় তিন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলনে নামার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ উদ্যোগে মাঠের আন্দোলনে নতুন মেরুকরণ হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। যা ২৬ ডিসেম্বরের পর যে কোনো সময় দেখা যেতে পারে। এজন্য বিএনপিসহ অন্তত দশটি দলের প্রতিনিধিরা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

প্রায় দেড় মাস ধরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমমনা দল এবং জামায়াতে ইসলামী। বুধবারের পর থেকে একই কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে দলগুলো। সোমবারের আগে জাতীয় দিবসের কর্মসূচি ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই। এ সময়ে দলকে আরও সংগঠিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। সাংগঠনিক জেলার পর এখন সাবেক সংসদ-সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। পাশাপাশি আন্দোলনের বিষয়ে নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। দাবি আদায়ে সমন্বয় ও ঐক্যের ওপর জোর দিচ্ছেন দলটির হাইকমান্ড। ১৮ ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচি শুরু করার কথা রয়েছে। যে আন্দোলনে কর্মসূচির ধরন কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। ২৬ ডিসেম্বরের পর ‘অলআউট’ কর্মসূচি নিয়ে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান  বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে, তার মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে। আর কিছু আছে যুগপৎ আন্দোলনে নেই। প্রথম তো সবাই যুগপতে হয়তো যুক্ত হবে, তারপর যদি সবাই আলোচনা করে মনে করে কাঠামোর পরিবর্তন দরকার সেটা করতে হবে। এখন হাতে সময় কম। কিন্তু সবাই যারা আন্দোলনে আছে তারা আলোচনা করে যদি মনে করে যে আন্দোলনের ধরনের কিছু পরিবর্তন আনা দরকার সেটা তো হতেই পারে।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মাঠে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছে। সেটা আমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই কর্মসূচি সেট করছি। যেহেতু নির্বাচন এগিয়ে আসছে, স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন আরও জোরদার হবে। সেক্ষেত্রে আরও কত কাছাকাছি থেকে আন্দোলন করা যায়, সেই বিষয়টি আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।’

শিগগিরই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি ও জামায়াত কর্মসূচি পালন করছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সময়ের প্রয়োজনে যে কোনো কিছুই হতে পারে।

অন্যদিকে প্রায় একই ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে চরমোনাইর পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারাও আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে আন্দোলন করছি। একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে যত রাজনৈতিক দল আছে, কিভাবে আন্দোলন গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও হবে। দাবি আদায়ে আমরা আশাবাদী। কারণ জনগণ তো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মানে হচ্ছে সব দল অংশগ্রহণ করবে। এখন সবাই যদি আওয়ামী লীগের হয়, সবাই যদি এক পক্ষের হয় তাহলে তো নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। গণভবনে বসে তো সিলেকশন হচ্ছে। অতএব মাঠে-ময়দানে নির্বাচনের নামে তামাশার তো প্রয়োজন নেই। দেশটা নৈরাজ্যের দিকে যাবে এটা তো কাম্য নয়। সুতরাং আলোচনা হচ্ছে কিভাবে আন্দোলনকে আরও গতিশীল করা যায়।’

এদিকে তফশিল ঘোষণার পর থেকে তা প্রত্যাখ্যান করে নানা কর্মসূচি পালন করছে বেশ কয়েকটি বাম দল। নেতারা জানান, বিএনপির সঙ্গে বামপন্থিদের আদর্শগতভাবে কোনো মিল নেই। তাই যোগাযোগের প্রশ্ন ওঠে না। তারাও যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে আছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স  বলেন, ‘নির্বাচন বাতিল করে সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতেই যাতে নির্বাচন হয়, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হয় সেই সংগ্রাম আমাদের চলবে। এক্ষেত্রে বামগণতান্ত্রিক জোট যে কর্মসূচিগুলো দিয়েছে, সেটা চলমান থাকবে। একই সঙ্গে আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলন করছি। কারণ এটি একটি নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক জোট। সুতরাং আমরা নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকেই সংগ্রাম অব্যাহত রাখব। কারণ যেসব দাবি করছি সেগুলো বাস্তবায়ন করবে জনগণ। সেই জনগণকে আমরা উদ্বুদ্ধ করব, সংগঠিত করব। যাতে করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেশে একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারি। এ কাজ শত বাধার মুখেও অব্যাহত থাকবে।’

 

 

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by DATA Envelope
Top