খুলনা শিপইয়ার্ড সড়কটি আরও বেহাল, প্রকল্পের খরচ বেড়েছে ১৬০ কোটি
সিটি পোষ্ট | প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৩৭

খুলনা মহানগরের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত সড়কটি চার লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২০১০ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আট বছর ধরে সড়কটি সংস্কারও করা হয়নি। ফলে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় গর্ত তৈরি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
২০১০ সালে খুলনা নগরের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে শিপইয়ার্ডের সামনে দিয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেয় কেডিএ। নাম দেওয়া হয় ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’। ২০১৩ সালের মে মাসে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক আকারও। ওই সময়ের ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ জুলাই সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক।
সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) আওতাভুক্ত। তবে কেডিএ সেখানে প্রকল্প গ্রহণ করায় ২০১৩ সালে কেডিএকে সড়কটি ছেড়ে দেয় সিটি করপোরেশন। এ কারণে সিটি করপোরেশন ওই সড়ক সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে কেডিএর দাবি, প্রকল্পের মধ্যে শুধু চার লেনের সড়ক করার বরাদ্দ রয়েছে। সড়ক সংস্কারের জন্য সেখানে কোনো বরাদ্দ নেই। এ কারণে তারাও সড়কটি সংস্কার করতে পারছে না।
ইতিমধ্যে ভাঙাচোরা ওই সড়কটি সংস্কারের দাবিতে কয়েক দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের ওই কর্মসূচিতে খুলনা নগরের বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশগ্রহণ করে। এসব কর্মসূচি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি চার লেন করার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখেছে কেডিএ। সড়কের বড় গর্তের মধ্যে পড়ে প্রায়ই যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু জায়গায় ইট ফেলে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হলেও তাতে সড়ক চলাচলের উপযোগী হয়নি। বিটুমিন উঠে গেছে। বেহাল অবস্থার কারণে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল অনেক কমে গেছে।
নগরের বান্দাবাজার, চানমারী বাজারসহ ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। রূপসা সেতু হয়ে নগরে প্রবেশেরও অন্যতম মাধ্যম। ভগ্নদশার কারণে ইজিবাইকসহ অন্য যানবাহন চালকেরাও সড়কটি এড়িয়ে চলছেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড ও বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, আধুনিক রাইস মিল ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ একাধিক কারখানা সড়কের দুই পাশে। এ ছাড়া সেতুর আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট অনেক কারখানা। এক সময় শহরের যানজট ও দূরত্ব এড়িয়ে সেতুতে যেতে ওই সড়ককেই বেছে নিতেন অধিকাংশ যানবাহনের চালক।
সড়কটির বেশির ভাগই পড়েছে নগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফ হোসেন বলেন, সড়কটিতে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। কিছুদিন আগেও এক গর্ভবতী নারী ইজিবাইকে করে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তা উল্টে যায়। এতে গর্ভেই বাচ্চাটি মারা যায়। সড়কটি কোন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন তা সাধারণ মানুষ বুঝতে চান না, তাঁরা শুধু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দোষারোপ করেন।
প্রকল্পের পরিচালক ও কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শহরের মধ্যে হওয়ায় সড়কের দুই পাশে মানুষের বসতি ছিল। এ কারণে জমি অধিগ্রহণ করতে সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে সরকার অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ তিন গুণ বৃদ্ধি করায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে।
সড়কটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মাত্র দুজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিয়েছেন। আরমান হোসেন বলেন, দরপত্র গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: