‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র’ মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে
সিটি পোষ্ট | প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৪৬

ক্ষমতার লোভ ও নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র ও বিপদগামী একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয় বলে তার পরিবার ও স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা দাবি করছেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়নি বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুনীর উল গীয়াস জানান, নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহর কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর পুলিশী পাহারায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
সেখানে নামাজে জানাজা শেষে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর প্রতিটি ক্যাম্পে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের কাজ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে মামলা হবে। আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ না পেলেও আমাদের পুলিশী কর্মতপরতার মাধ্যমে হামলাকারিদের ধরতে অভিযান চলছে।’
নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিব উল্লাহ দাবি করে বলেন, ক্ষমতার লোভ ও নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেওে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ মাস্টার আব্দুর রহিম, মুর্শিদ, লালুর নেতৃত্বাধীন ২০/২৫ জন মিলে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
হত্যাকারীরা ‘আল ইয়াকিন’র সদস্য বলে দাবি তার।
হাবিব উল্লাহ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে তার পরিচালিত সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থানকালে ২০/২৫ জনের একটি বন্দুকধারী দল তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও মুহিবুল্লাহর বুকে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এরমধ্যে তিনটি গুলি মুহিবুল্লাহর বুকে লেগে মৃত্যু হয় তার।
নিহত মুহিবুল্লাহর চাচাত ভাই নুরুল আমিন জানান, ওই দিন ঘটনার সময় সংগঠন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট অফিসে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন। কেউ সংবাদ শুনছিলেন, কেউ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। এসময় বন্দুকধারীরা অফিসে ঢুকে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করে মুহিবুল্লাহর বুকে। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য রোহিঙ্গাদেরর মারধর করা হয়। গুলির শব্দ শুনে অফিসে ছুটে এসে এসব দেখতে পেয়ে আঁৎকে উঠি।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা মো. জোবাইর বলেন, ‘১২ লাখ রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার মানুষটি হারিয়ে আমরা নির্বাক। মুহিবুল্লাহ শুধু আমাদের নেতা ছিলেন না, ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে কথা বলে আসছিলেন। হয়তো তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী সন্ত্রাসীরা। এই ক্ষোভে তাকে গুলি করে হত্যা করছে।’
রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ জানান, ‘রোহিঙ্গাদের প্রিয় মুহিবুল্লাহ নেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তাকে গুলি করে হত্যার খবর শুনে আতংকে আছি। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা ক্যাম্পে আসলে তিনি প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে হত্যার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরও একধাপ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহর নিজ অফিসে ৫ রাউন্ড গুলি করে। এসময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে তিনি পড়ে যান। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পরে উখিয়া থানা পুলিশকে মৃতদেহটি হস্তান্তর করে।
তিনি আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট নামক ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠনটির চেয়ারম্যান ছিলেন। মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর সংগঠনটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতংক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: